//
I'm
সব দেখে ১৯৮২ সালের ৯ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার টিপ নিয়ে "টিপ কি আমাদের?"
Date : April 22, 2022, 12:53 p.m.
Blogger Name: Hasan Jamil
কয়েক দিন আগে টিপ নিয়ে বেশ হৈচৈ হল। এখন পুলিশের একটা তদন্ত রিপোর্ট হওয়ার পরে সব চুপচাপ। ওপার বাংলার কাছে পশ্চাদদেশ বিক্রি করে দেয়া কিছু পত্রিকা নামের কলঙ্ক আর নাটক পাড়ার কিছু হিজড়ার লাফালাফিতে মনে হচ্ছিল টিপ ছাড়া বাংলাদেশের সংস্কৃতি অচল। আর বাংলাদেশে মুসলিমদের কাজই হচ্ছে টিপ পরা মহিলাদের উত্যক্ত করা। সব দেখে ১৯৮২ সালের ৯ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার টিপ নিয়ে "টিপ কি আমাদের?" শিরোনামের লেখার অংশ বিশেষ পাঠকের জন্য শেয়ার না করে পারলাম নাঃ-
"কপালে টিপ আমাদের দেশে একটি বিশেষ ধর্মালম্বীরাই দিয়ে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সিঁথির সিঁদুর একটি বিশেষ পরিভাষা। বিবাহিত মহিলারা এটাকে সধবার চিহ্ন মনে করে। যদি কোন হিন্দু মহিলাকে ঠাট্টা করেও বলা হয়, “আপনার কপালের টিপ আর হাতের শাখা ভাঙা কেন?” অমনি সে শুধু রাগান্বিতই নয়, বরং ঠাট্টাকারীর চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে। সিঁথির সিঁদুর নানাভাবে বিকৃত হয়ে হলুদ, নীল, সবুজ ইত্যাদি টিপে পরিণত হয়েছে। এরপর মুসলিম পরিবারের মেয়েরা এটার ব্যবহার খুব কমই করে থাকে। আজ থেকে পনের বিশ বছর আগে এটার প্রচলন মুসলিম পরিবারে আদৌ দেখা যেত না। ঐ বিশেষ দৈনিকটির চিঠিপত্রের কলামে যারা লিখেছেন, তাদের মধ্যে যারা মুসলিম বলে পরিচিত, তারা তাদের মা অথবা দাদী নানীদের কাছে জিজ্ঞেস করে আমার কথার সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেন। সাংস্কৃতিক সাজগোজের এ ঐতিহ্য সম্পর্কে কথা বলতে গেলে বড় বড় বই-কেতাব পড়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই। সমাজের হিন্দু মুসলিম সকলের বাস্তব আচরণ প্রত্যক্ষ করলেই চর্মচোখে তা দেখা যাবে। আজকাল যারা এটা ব্যবহার করেন, তারা আমাদের সমাজের তথাকথিত প্রগতিবাদেরই অনুসারী। তাদের সংখ্যা শতকরা দুয়েকজনেরও কম। সুতরাং এ দুয়েকজনের মত নিয়ে জাতীয় কালচার বা সংস্কৃতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তারা নিজেদের জন্য যা খুশি করতে পারেন, কিন্তু নিজেদের বিকৃত চিন্তার ফসলকে সমগ্র জাতির সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বলে চাপিয়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়।
পানি আর জল শব্দ দুটো যা বোঝায়, তা নিঃসন্দেহে পানীয়। কিন্তু শব্দ দুটির ব্যবহারের কারণে একটি মুসলিম সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে, অপরটি হিন্দু সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে গেছে-একথা কে অস্বীকার করবে? যারা কপালের টিপকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালীর কালচার বলে চালাতে চান, তারাও নিঃসন্দেহে স্বাভাবিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জলকে পানি আর পানিকে জল বলেন না। হয়তো কেউ বলতে পারেন শব্দ দুটির যেকোন একটি ব্যবহার করলেই চলে। শব্দের পার্থক্যে তরল জিনিস তো আর শক্ত হয় না। কিন্তু যে মনোভাবের কারণে অথবা জাতীয় চেতনার গরজে পাশাপাশি সুধীর বাবু আর আবদুল্লাহ সাহেব জলকে পানি আর পানিকে জল বলতে পারলেন না, সে মনোভাবকে সাংস্কৃতিক চেতনা থেকে বাদ দেওয়ার সাধ্য অন্তত: আমার নেই। এ চেষ্টা করতে যাওয়াটাও অপচেষ্টা আর বাস্তবতার অস্বীকৃতি।
কথা উঠছে ভারতবর্ষের বাঙ্গালী হিন্দু ছাড়া অন্য হিন্দুরা কেউ টিপ পরে না। এটাই টিপের পক্ষে বাঙ্গালী কালচার হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ লোকের জীবনধারা দিয়েই বাংলাদেশের কালচারকে বিচার করতে হবে। সন্ধ্যা বেলার ভাটির হাওয়ায় এক ধর্মপ্রাণ মুসলিম মানসকে বাতাসের ঢেউয়ের সাথে সাথে কাবার পথে নিয়ে যাওয়ার কারণেই সে গান ধরে, “পুবাল হাওয়া-পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া”। আর একজন হিন্দুর মনকে ধাবিত করে গয়াকাশী অথবা বৃন্দাবনের দিকে। এখান থেকে কাবার যাত্রীকে জোর করে বাড়ীর কাছে বলে গয়াকাশী অথবা বৃন্দাবন নিতে চাইলে অথবা গয়াকাশীর যাত্রীকে কাবার পথে হাঁকিয়ে নিতে চাইলেই গোলমাল বাঁধবে। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এ গোলমাল আর হট্টগোল বাধিয়ে ভারতের পরিবেশ আজও শান্ত হয়নি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার হাত থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা আর গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ক্যাপসুল ভারতকে রক্ষা করতে পারেনি। এক ধরনের হীনমন্যতা আমাদের তথাকথিত প্রগতিবাদীদের পেয়ে বসেছে। বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলাটা আধুনিকতা প্রমাণের অন্যতম যুক্তি হিসেবে এসব প্রগতিবাদীরা ব্যবহার করে থাকে। এক সময়ে পশ্চিমের বাতাস আমাদের আদর্শচ‚্যত লোকদেরকে আকুল করে ছিল। এরপর আসলো পুবের হাওয়া। সে হাওয়াও এখন কিছুটা নিস্তেজ। এরপরও আমাদের দৈন্য প্রগতিবাদীরা সোচ্চার। কেননা, আমাদের এখানে হাওয়াটা লেগেছে পরে। এজন্যই বোধ হয় প্রমথ চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “পাশ্চাত্যে যে মতবাদ মরে যায়, তাই নাকি ভূত হয়ে আমাদের বুদ্ধিমান লোকদের ঘাড়ে চাপে।”
July 21, 2021 | 100 Comments