//

I'm

Md Abu Taher

Social Worker, Chairman Candidate, Consultant, Businessman, Political Person, Public Figure

Abu Taher
Dummy Image

মরহুম শশুর আব্বার ডেথ সার্টিফিকেট

Date : April 4, 2022, 12:17 p.m.

Blogger Name: MD Abu Taher

তখন রাত ২.৪৫ টা। আমি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের বকুল সেলের এক রুমে একা থাকি। দিনের বেলা কোর্টে এসেছিলাম; পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করে জেনেছিলাম সবাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন; আলহামদুলিল্লাহ। ক্লান্ত -শ্রান্ত হয়ে কোর্ট থেকে রুমে ফিরে সালাতুল এশার নামাজের পর রাতের খাবার শেষ করে ভোর রাতে জাগবো বলে কিছুটা আগে ভাগেই ক্লান্তি নিয়ে বিশ্রামে গিয়েছি। জেল জীবনে আমি সাধারণত মন খারাপ করতে চাইতাম না। কারণ আমার একার মন খারাপ আমার অনেক কারাবন্দি ভাইদের উপরে অসম্ভব প্রভাব ফেলতো। আমার ভালো থাকার প্রভাব কিংবা আমার মন্দ থাকা ও । তাই শত- সহস্র কষ্টের মধ্যেও ভালো থাকার সর্বোচ্চ অভিনয় চালিয়েছি পুরো সাড়ে তিন বছর। সে রাতেও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

অজু করে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজের জন্য দাঁড়িয়েছি। এক রাকাত শেষে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াতেই কারারক্ষী সালাম দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। কারারক্ষী ভাইদের অপেক্ষা করতে দেখলে আশা-নিরাশায় মনটা পেরেশান হয়ে উঠতো কি জানি কি খবর দেবেন! সালাম ফিরিয়ে কথা না বলার সুযোগ দিয়েই মোনাজাত শেষ করে কথা বলতে চাইলাম। কারারক্ষী ভাইও আমার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকলেন। আমি বুঝতে পারলাম শুধুমাত্র আমার সাথে গল্প করা কিংবা নিয়ম অনুযায়ী চা বিস্কিট খাওয়ার জন্য নয়। নিশ্চয়ই কোন জরুরী প্রয়োজন; তাই মোনাজাত দীর্ঘ করলাম না। লকাপের কাছে এসে দাড়াতেই আমার মাথায় হাত দিলেন তিনি। বললেন মাসুদ ভাই মন খারাপ করবেন না। পৃথিবীতে কে কদিন বাঁচে বলেন? আমি বললাম কেন কি হয়েছে?

আমার আব্বা অসুস্থ জানতাম। তাই মনটা অস্থির হয়ে উঠল। জিজ্ঞেস করলাম- বাসায় কারো কিছু হয়েছে? বললেন না তেমন কিছু না। আপনার শ্বশুর আব্বা অসুস্থ; দোয়া করার জন্য বলেছেন।

কারাগারে থাকতে তিনটি বেদনাদায়ক মৃত্যুর সংবাদ আমি ধারণ করেছি। অভিজ্ঞতার আলোকে সংবাদ দেওয়ার সংস্কৃতি আমি কিছুটা বুঝতে সক্ষম হলাম। শুধুমাত্র সুস্থতার জন্য আমার কাছে দোয়া চাওয়ার এবং কারারক্ষীর মাধ্যমে খবর পাঠানো জরুরি ছিল না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে ভালো করে একটু বলুন। কারারক্ষী ভাইয়ের জবাব ছিল আপনাকে সবর করতে হবে। এবার পুরোটা আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শশুর আব্বা, শিক্ষক, অভিভাবক, অসংখ্য শহীদের জানাজার ইমাম হিসেবে যাকে পেয়েছি আমার প্রিয় ইসলামী আন্দোলনের শহীদি ময়দানের ইমামকে হয়তো হারিয়ে ফেলেছি।

সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলাম। কেউ নিশ্চয়ই সাক্ষাতে আসবেন। তখন নিশ্চিত হলাম আমার শশুর আব্বা আজকের এই দিনের দিবাগত রাতে ইন্তেকাল করেছেন- "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন"।

আমার বের হওয়ার জন্য সরকারের উপরের নির্দেশনা পাওয়া ছাড়া প্রায় ৩ মাস আগে আমার সকল মামলার জামিন সম্পন্ন হয়েছিল। এমনকি একটি পিডব্লিউ প্রত্যাহার করা ছাড়া বাকি সকল কাজ সম্পন্ন করা ছিল। আগেরবারের তিক্ত অভিজ্ঞতা সামনে রেখে এবারও অমানবিক সরকারের গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া আমি বের হতে পারব না এই শঙ্কায় অপেক্ষাকৃত বের হওয়ার চেয়ে ভিতরে থাকাই আমার জন্য শ্রেয় এরকম সান্ত্বনায় জামিন হওয়ার পরেও আমি তিনমাস ধরে জেলখানার ভিতরে আছি।

জানলাম মরহুম শশুর আব্বার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে আমাকে বের হতে হবে। কি জালিম শাসনের একটা রাজ্য। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন দায়িত্বশীলগণ, আইনজীবীগণ। আকুল আবেদন জানাই- আমার শশুর আব্বার জানাযায় আমি শামিল থাকতে। সব চেষ্টাই করা হলো কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার। ৮ ঘন্টা আমাকে জেলগেটে বসিয়ে রাখা হলো মুক্তির জন্য। প্রথমত অপেক্ষা ডেথ সার্টিফিকেট এখনো আসেনি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন তো আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেই ফেললেন আপনার শ্বশুর আব্বা মারা যাওয়াতে আপনার কপাল খুলছে। না হলে আজকেও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলাম আপনাকে (Rearrest) পুনঃগ্রেপ্তার করার জন্য।

তারপর শুরু হল অমুক সংস্থার ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেছে তো অন্যটা পাওয়া যায়নি; অন্যটা পাওয়া গেছে তো আর একটা বাকি আছে। এই করতে করতে সকাল বেলার মুক্তি দুপুর, বিকেল গড়িয়ে মাগরিব হয়ে গেল। জানলাম আমার জন্য জানাজা অপেক্ষা করছে। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর এত দীর্ঘ হল যে - আমি জেল থেকে বাইরে পা রাখতেই একজন মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষমান ভাই আমাকে তুললেন; আমি তার কাছে জানতে চাইলাম আমি জানাজায় যাব কিনা? তিনি আমাকে জানালেন আপনি কবর জিয়ারতে যাবেন ইনশাআল্লাহ।

মোটরসাইকেল যিনি চালাচ্ছিলেন তাকে বললাম প্লিজ আমি বসে থাকতে পারছি না। আমাকে একটু স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ দিন। নেমে ল্যাম্পোস্টের নিচে বসলাম; ৫ মিনিট সময় চাইলাম। কান্না মানুষকে স্বাভাবিক করে তাই- কিছু সময় আরশে আজিমের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছলাম। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কে বললাম আমার মরহুম শশুর আব্বা আমার সরাসরি শিক্ষক ইসলামের, ইসলামী আন্দোলনের, খুব সাদাসিধে জীবন ধারণের, পরিবার এবং সামাজিক জীবনে সমন্বয় করে জীবন পরিচালনার, সংগঠনের প্রতি আনুগত্যের চূড়ান্ত পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন- আর সব দুঃখ কষ্ট হজম করার এক কঠিন প্রশিক্ষণ তিনি আমাকে হাত ধরে দিয়েছিলেন। আপনি আমার পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম শ্বশুর আব্বাকে মাফ করুন, দয়া করুন।

আমার পারিবারিক জীবনের শুরুতে আমার পরিবার যখন বিয়ের বিভিন্ন প্রস্তাবনা আমার সামনে রেখেছিলেন তখন শুধু বলেছিলাম পুরো জীবনের জন্য আমার বাবা-মার পাশাপাশি আমার একজন শ্রদ্ধেয় আতাউর রহমানের প্রয়োজন। যদি আপনাদের তেমন বড় কোন আপত্তি না থাকে আমি আমার পরম শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী আতাউর রহমানের জীবনের ইতিহাস এর সাথে সম্পৃক্ত হতে চাই। আমি আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে এখনো মাঝেমধ্যে বলি; আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তারচেয়েও বড় কথা হলো আমি আমার পরম শ্রদ্ধেয় নেতা এবং পিতা মরহুম শশুর আব্বা আতাউর রহমানের সাথে থাকতে চেয়েছি। উনার সাদাসিধে জীবনযাপনের অংশ ছেড়া জুতা, মলিন জামা কাপড় কে পাশে থেকে একটু ভিন্নতা আনতে চেয়েছিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে সিজদাবনত চিত্তে লাখো কোটি শুকরিয়া তিনি তা কবুল করেছেন। আমার পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম শশুর আব্বার সাথে- শহীদ আমীরে জামায়াত secretary-general সহ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে অকৃত্রিম সম্পর্ক আমার নিজের চোখে দেখা।

আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমার পরম শ্রদ্ধেয় শশুর আব্বার মানবিক দুর্বলতা গুলো মাফ করে দিয়ে প্রিয় এই কাফেলার ছোটখাটো খেদমত যা তিনি করেছেন এগুলোকে কবুল ও মঞ্জুর করে জান্নাতুল ফেরদৌসের বিস্তীর্ণ বাগানে তাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করেন। আপনাদের সকলের কাছে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মরহুম শশুর আব্বার জন্য দোয়ার ভিখারী হয়ে থাকলাম।

- শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

সেক্রেটারি, ঢাকা দক্ষিণ জামায়াত।

সাবেক ছাত্রশিবির সভাপতি।

July 21, 2021     |     100 Comments

Related Blog Images
Please login for comment
Login

7 Comments

Lorem ipsum dolor sit amet, ut qui commodo sensibus, id utinam inermis constituto vim. In nam dolorum interesset, per fierent ponderum ea. Eos aperiri feugiat democritum ne.
200